অভিমান
কষ্টের আর এক নাম
অর্পিতের সাথে এনগেজমেন্টা সেরে ফেলল জয়া। অর্পিত ছেলে হিসেবে ভালোই, স্বচ্ছল পরিবারের একমাত্র ছেলে, জয়া ছাড়া আর কিছুরই নেশা নেই। খুব সাধারণ-জয়া যেমনটা চেয়েছিল।আজ সে খুশী তবুও কোথাও যেন বিষন্নতা তাকে ঘিরে ধরেছে। লোকজন প্রায় সবাই চলে গেছে। অর্পিতের সাথে কথা বলতে বলতে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় জয়া-আজ তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহুর্ত তবু তার মনে ভীড় করে আসছে বিষন্নতার মেঘ- বিষন্নতার নামটা হয়ত ঋতম। অফিস কলিগ অর্পিতকে ভালোই লাগতো জয়ার, বাড়ির চাপে পড়ে বিয়ে করতে চাইলেও আজও ঋতমকে ভুলতে পারেনি জয়া। ঋতম এমনই একজন মানুষ যাকে হয়ত ভোলা যায় না। শ্রাবণের রাত, ফোনের অপরপ্রান্তে অর্পিত, বৃষ্টির আলতো ছাট ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে জয়ার সমস্ত শরীর। হঠাৎ একরাশ দমকা শীতল বাতাস টেনে নিয়ে গেল বছর দুয়েক আগের জীবনে। ফোন রেখে স্মৃতির হাত ধরে জয়া ফিরে গেল ঋতমের কাছে।
এইরকম এক বৃষ্টির দিনে প্রথম দেখা হয়েছিল ঋতমের সাথে, সেদিনও বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি, সেদিন বৃষ্টিস্নাত জয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে গুন গুন করে গান গাইছিল হঠাৎ চোখ পড়ল সামনের বাড়ির জানলার দিকে একটা বছর পঁচিশের ছেলে তার দিকে তাকিয়ে, খানিক বিরক্তি নিয়ে ঘরে ঢুকে পড়লেও, ছেলেটার প্রাণবন্ত হাসিটা কিছুতেই ভুলতে পারছিলনা জয়া। সামনে ফাইনাল তাই বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে মন দিল নোটসের খাতায়। জীবনের কুড়িটা বছর তাকে একাই লড়তে হয়েছে, ভালোবাসা পাইনি কারোর, স্বার্থের কারনে মা ঘর বেঁধেছে অন্যের সাথে বাবাও দূরে ঠেলে দিয়েছে অনেক আগেই জয়ার অবলম্বন বলতে দিদা, টিউশনির টাকায় হাত খরচা জোগাড় করে পড়াশোনাটা তাকে চালিয়ে যেতেই হবে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্যে, পরিস্থিতি জয়া কে বয়সের আগেই অনেক বেশী পরিনত করে দিয়েছে।
টিউশন থেকে বেরিয়ে অটোয় উঠে খানিকটা রাস্তা যেতেই লুকিং গ্লাসের চোখ পড়তেই দেখে কালো ফেমের চশমার ভিতর থেকে একজোড়া বুদ্ধিদীপ্ত চোখ তাকেই দেখছে মুখে সেই প্রাণবন্ত হাসি সৌজন্যের হাসি হেসে দৃষ্টি সরিয়ে নিল জয়া। স্টপেজে নামতেই পিছন থেকে ডাক এলো- "হ্যালো, আমি ঋতম, তোমার নামটা জানতে পারি? " সেদিনের আলাপের পর কোনও কাজেই মন বসাতে পারছিলনা জয়া। রাস্তায় পাড়ার মোড়ে টুকটাক দেখা হতো আর বৃষ্টির দিনে একান্তে দেখা হতো জানালার ধারে।
মিশুক হাসিখুশি মিতভাষী স্বভাবের ঋতম খুব অল্প দিনেই মিশে গিয়েছিল পাড়ার সবার সাথে তারই উদ্যোগে পাড়ায় সেইবার রবীন্দ্র জয়ন্তী হয়েছিল খুব বড় করে। সেইদিন লাল পাঞ্জাবী পড়া ঋতমকে দেখে চোখ ফেরাতে পারেনি জয়া, লাল পাঞ্জাবীতে তার ব্যক্তিত্ব আরও বেশী করে ফুটে উঠেছিল চেহারায়- জয়ার সেদিন ইচ্ছা করেছিল ঋতমের কাছে গিয়ে কথা বলতে কিন্তু তার গাম্ভীর্য আভিজাত্য কোথাও জেন আটকে দিয়েছিল জয়া কে। বাড়ি ফিরে আয়নায় নিজেকে দেখে জয়া উপলব্ধি করেছিল কোনদিক থেকেই সে ঋতমের যোগ্য নয়, তাই ভালোলাগা টাকে দমিয়ে রেখেছিল। পাড়ায় যেতে আসতে কথা হতো ঋতমের সাথে ওই ভালোলাগাটুকু নিয়ে দিন কাটাত জয়া। ক্লাবের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের দিন অনেক গল্প হল মফস্বলের সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে ঋতমের সাথে। তারপর থেকে প্রায় কথা হত আড্ডা হত। ঋতমের প্রাণবন্ত হাসিটা আর বুদ্ধিদীপ্ত চোখটা আরো বেশী করে কাছের করে দিচ্ছিল, একটু একটু করে ভালোবেসে ফেলেছিল জয়া, নিজের আশ্রয় খুঁজছিল ঋতমের কাছে, ঋতমের প্রতি দুর্বলতা প্রকাশের ভয়ে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিল জয়া - একপ্রকার প্রায় এড়িয়ে চলত ঋতমকে। হঠাৎ একদিন ভোর চারটের সময় অচেনা নম্বরে ফোন,.রিসিভ করতেই অপরপ্রান্তে ভেসে উঠল ঋতমের গলা- "ভালোবাসবি আমাকে?? আমাকে একটু আশ্রয় দিবি তোর কাছে??" সেই দিনের সেই প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেনি জয়া শুধু কান্না পাচ্ছিল ছুট্টে বারান্দায় গিয়ে দেখে ঋতম জানলায় দাড়িয়ে। এইভাবেই শুরু হয়েছিল পথ চলা।।
"কি রে কাল অফিস যাবিনা ???" - দিদার গলায় সম্বিৎ ফিরে এলো জয়ার,, "তুমি শুয়ে পড় দিদা আমি আসছি।"বাইরে বৃষ্টি তখন কিছুটা ধরেছে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখল একটা বাজে, ঋতমের মেস বাড়িটা এখন ফ্ল্যাট হয়ে গেছে সেই দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে শুয়ে পড়ল। আজ রাতে জয়ার ঘুম এলোনা শুধু মনে হচ্ছে সে অর্পিতকে ধোঁকা দিচ্ছে, নিজেকে ঠক্কাচ্ছে। আজও কি তার সবকিছু জুড়ে ঋতমই আছে??, তছনছ হয়ে যাচ্ছে তার সব ভাবনা গুলো কেমন যেন তালগোল পেকে যাচ্ছে। অসম্ভব এক দোটানায় পড়েছে জয়া। কাজে কিছুতেই মন বসাতে পারছেনা। অর্পিত শুরু থেকেই জয়ার অস্থিরতা লক্ষ্য করেছে কারনটাও তার অজানা নয়। অর্পিত প্রথম থেকেই জানত জয়ার অস্থিরতার একমাত্র কারণ ঋতম। কোনদিন সে জয়াকে নিজের করে পাবে ভাবতেই পারেনি, জয়ার অতীতটাকে নিয়েই সে জয়ার সাথে ভালো থাকতে চায় অর্পিত।বন্ধুর মতো পাশে থেকেছে, অতীতটাকে ভুলানো চেষ্টা করে যাচ্ছে আজও। লাঞ্চ বেক্রে অর্পিত এসে বলল- "আজ অফিসের পর লেকে যাব। যাবে তো?" জয়া বলল- হুম! যাবো। অফিস শেষে বেরিয়ে পড়ল মুড অফ থাকলে জয়া সাধারণত চুপচাপই থাকে অর্পিত নীরবতা ভেঙে বলল- "সংশয়ে আছো?" জয়া কোনো উওর দিল না। শুধু বলল- "অভিমান বড় খারাপ জিনিস অর্পিত সবকিছু তছনছ করে দেয়।" লেকে এসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে জয়া বলল- "আচ্ছা অর্পিত আমি যদি তোমার ওপর অভিমান করে অন্য কারোর সাথে মিথ্যা প্রেমের অভিনয় করি পরে যদি নিজের ভুলের ক্ষমা চাই তুমি কি আমাকে ফিরিয়ে দেবে? " অর্পিত জয়ার কথার কোনো মানেই বুঝতে পারলনা। শুধু বলল- "কি হয়েছে?" জয়ার চোখ ছলছল করছে অর্পিত দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল- "আমি কি ঋতমকে ফিরিয়ে দিয়ে ভুল করেছি?? আমি কি তোমাকে ঠকাচ্ছি? " অর্পিত খুব সহিষ্ণু প্রকৃতির মানুষ এনগেজমেন্টের পরের দিন ভাবী স্ত্রী এর মুখে এইরকম কথা সত্যিই কষ্ট দায়ক। অর্পিত বরাবরই জয়ার ভালো বন্ধু হতে চেয়েছে তাই নিজের কষ্ট চেপে জয়াকে বলল- "ভালোবাসলে ক্ষমা করে দিতে হয়। ভালোবাসা ক্ষমাশীল জয়া। অভিমান দুটো মানুষকে অনেক দূরে করে দেয়।" জয়া উঠে পড়ল-"বাড়ি যেতে হবে অর্পিত"। ট্যাক্সিতে উঠে ভাবতে লাগল সত্যিই কি ঋতমকে সেদিন ক্ষমা করে দেওয়া উচিত ছিল।
জয়া আর ঋতমের সম্পর্কের বয়স তখন তিন। ঋতম এমবিএ শেষ করে চাকরী খুঁজছে জয়ার তখন কলেজ শেষের দিকে। সম্পর্কের উত্থান পতনের মধ্যেও ভালোবাসাটুকু ছিল। পরবর্তীকালে ঋতমের অহমিকা জয়াকে অনেক আঘাত করেছে, ঋতম বারবার বুঝিয়ে দিত জয়া কোনো দিকেই তার যোগ্য নয় অথচ এই জয়ার জন্যে সে অনেক কঠিন পথ পেরিয়ে এসেছে অনেকের সাথে লড়াই করেছে। বেকারত্বের সমস্ত অবসাদ চাপিয়ে দিত জয়ার ওপর, ঋতমের এইসব কিছুই হাসি মুখে মেনে নিয়ে ভালো থাকতে চেয়েছিল জয়া কারণ ঋতম যে তার বাবা মা প্রেমিক সবকিছু। জয়ার অবলম্বন ছিল ঋতম-তার লড়াইয়ের একমাত্র সঙ্গী। রোজকার অশান্তির মধ্যে একটা শান্তি ছিল কিন্তু একটা মিথ্যা শেষের শুরু করেছিল। বাড়ির চাপে জয়ার সেদিন বিয়ের সমন্ধ এসেছিল অনিচ্ছা সত্বেও পাএপখের সামনে বসতে হয়েছিল জয়াকে, বিয়েটা ভেস্তে দেওয়ার জন্য ছেলেটির সাথে দেখা করতে চেয়েছিল জয়া ঋতমকে গোপন করে, পরে অবশ্য ঋতমকে জানাতে চেয়েছিল কিন্তু কোন এক তৃতীয় ব্যাক্তির মুখে ঘটনাটা শুনেছিল ঋতম। রাগে কষ্টে ঋতম সেদিন প্রথম হাত তুলেছিল জয়ার গায়ে।সেইদিনের খনিকের মিথ্যা আর বিশ্বাসঘাতকতা মেনে নিতে পারেনি ঋতম। জয়ার বলা সত্যি গুলো সেদিন মানতেই পারেনি, ফিরিয়ে দিয়েছিল জয়াকে। বিশ্বাস ভাঙ্গার যন্ত্রণাটা ফিরিয়ে দিতে অন্য কোন আশ্রয় খুঁজেছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়াকে ছেড়ে যেতে পারেনি ঋতম। ক্ষমা করলেও মনে একটা সন্দেহ জমা হয়েছিল একদিকে বেকারত্বের জ্বালা অন্যদিকে সম্পর্কের টানাপোড়েন। জয়া তখন সবে অল্প মাইনের চাকরিতে ঢুকেছে সেভাবে আর সময় দিতে পারতনা ঋতমকে দিনের দিন তিক্ততা বারতেই লাগত। ঋতমের অবসাদ নিতে নিতে জয়া ক্লান্ত তবুও চেষ্টা করত পাশে থাকার। পরিস্থিতির চাপে ঋতম ভুলেই গিয়েছিল জয়াকে সে পাগলের মতো ভালোবাসে, জয়ার চোখে জল দেখলে যে ঋতমের একদিন কষ্ট হতো, সহ্য করতে পারত না আজ সেই জয়ার চোখে রোজ জল আসে-ঋতমের আঘাতে সেই জয়া আজ রাতের পর রাত কাঁদে ।। ঋতমের জয়ার প্রতি অবহেলা দিনের পর দিন বাড়তে লাগল তবুও ঋতমের পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে সবকিছু সহ্য করতে জয়া,ঋতম নিজের অজান্তেই জয়ার সাথে ইগোর লড়াইয়ে নেমে পড়েছিল। প্রথম মাইনের টাকায় জয়া ভালোবেসে ঋতমকে একটা পাঞ্জাবী দিতে চেয়েছিল। কোনো কারণ ছাড়াই ঋতম সেদিন জয়াকে অপমান করে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিল। সেই অপমানটা মেনে নিতে পারেনি পরে ভুল বুঝতে পেরে জয়ার কাছে ক্ষমা চাইলেও জয়া ঋতমকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। তার কিছুদিন পরেই ঋতম ওই মেসটা ছেড়ে দেয়। শুধু একটাই এস. এম. এস করেছিল জয়াকে- "পাগলী, আজ তুই আমায় ফিরিয়ে দিলি। একদিন তোকে আমার কাছে ফিরে আসতেই হবে। আমি চলে যাচ্ছি আর কখনো ফিরে আসবনা তোর কাছে, তোকেই আসতে হবে। আমি শুধু সেদিনের অপেক্ষায় থাকব। ভালো থাকিস।" ঋতমের অভিমান আর জয়ার ইগো ওদের আর কাছে আসতে দেয়নি। জয়া ভেবেছিল ফিরে যাবে কিন্ত ঋতম যদি তাকে ফিরিয়ে দেয়। একবার ফোনও করেছিল নম্বরটা বন্ধ। বাড়ির ল্যান্ডফোনটাও বেজে যায়। এইভাবেই কেটে যায় দুটো বছর। ঋতম যোগাযোগের কোনও উপায় রাখেনি। অপিতের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে বাধ্য হয়েছিল সম্পর্কে যেতে। জয়ার বাড়ির লোকের প্রস্তাবে অর্পিতকে বিয়ে করার কথা ভাবে।
বাড়ি ফিরে ঋতমের দেওয়া চিঠিগুলো বের করল আলমারি থেকে, একটার পর একটা পড়তে লাগল ঋতম খুব ভালো লিখতে পারত, দোলের দিনের লেখা একটা চিঠিতে জয়ার মন আটকে গেল- "পাগলী, আজ তোকে লাল আবীরে খুব সুন্দর লাগছিল। তোর মাথায় যে আবীরটা আমি দিয়েছিলাম সেটা কিন্তু সিঁন্দুর ছিল। আজ দোলতলায় আমাদের বিয়ে কিন্তু হয়ে গেছে। সারাজীবনের জন্য তুই আমার বউ............" এই লাইনটা এসে বারবার আটকে গেল জয়া। আজ জয়ার মনে হচ্ছে সে বড্ড ভূল করেছে, নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হচ্ছে অনেক দেরী করে ফেলেছে সে-আজও কি ঋতম তারই আছে নাকি সংসার পেতেছে অন্য কারোর সাথে। আজ যদি জয়া তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ঋতম কি তাকে ফিরিয়ে নেবে নাকি ফিরিয়ে দেবে?? নানান ভাবনায় অস্থির হয়ে আছে জয়া। দুদিন অফিস যায়নি ফোন বন্ধ, কারোর সাথেই সেভাবে কথা বলছেনা। জয়া অপিতকে তার সব অনুভূতির কথা বলল। যাওয়ার আগে অপিত বলল- "ঋতমের সাথে দেখা কর। এই দু’বছরে আমাদের ভালোবাসার কথা বলতে ঋতমের সাথে তোমার কাটানো মুহুর্তের কথাই ছিল। আমাদের নিজেদের কোনো কথা ছিলনা, তুমি আমার মধ্যে ঋতমকে খুঁজতে। আমি তোমার ভালো বন্ধু ছাড়া কিছুই হয়ে উঠতে পারিনি। ওর মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়াও। আর সময় নষ্ট করোনা, বাড়িতে আমি কথা বলব। আমায় নিয়ে ভেবোনা।" কান্না চেপে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল অর্পিত। জয়ার চোখের জলও বাঁধ মানছে না। অনেক খুঁজে ঋতমের লেখার একটা পুরোন ডায়েরির মধ্যে বাড়ির ঠিকানাটা পেল। কিছুটা স্বস্তি পেলেও উৎকণ্ঠায় উদ্দীপনায় রাতটা যেন কাটতেই চাইছেনা।
ভোর হতেই স্নান সেরে তৈরী হতে লাগলো। আজ জয়া শাড়ি পরবে। ঋতম সবসময় বলত তাকে নাকি শাড়িতেই সুন্দর লাগে। আজ সে টিপ পড়েছে। জয়া কোনো দিন টিপ পড়ত না এই নিয়ে কত ঝগড়াই না হয়েছে ঋতমের সাথে। গাড়ি ছুটছে তার সাথে উদ্দীপনাও বাড়ছে। ঋতম যদি তাকে ফিরিয়ে নাও নেয় ক্ষমা তার কাছে চাইতেই হবে। আজ জয়া যা কিছু হয়েছে সবটাই ঋতমের অনুপ্রেরণায়। ঋতমের ওপর অভিমানে সে কি ভুল করতে যাচ্ছিল তাও সে বলবে।
ঋতমের প্রিয় গোলাপ আর প্রিয় মিষ্টি নিয়ে এক চরম উত্তেজনায় কাঁপা কাঁপা হাতে বেল বাজাল। টেনশনে তার পা কাঁপছে দু’বছর পর আবার দেখা হবে ঋতমের সাথে। আবারও একবার বেল দিতে এক শীর্ণকায় ভদ্রলোক বেরিয়ে এলো, জয়া নিজের পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলো-"ঋতম আছে? আমি ওর সাথে দেখা করতে এসেছি। " ভদ্রলোক বললেন -" আমি ওর বাবা। তুমি ভিতরে এসো।" চরম উৎকণ্ঠায় ঘরে ঢুকেই দেখে সেই বুদ্ধিদীপ্ত চোখে ঋতমের প্রাণবন্ত হাসি। ষোল/কুড়ি ফ্রেমে বাঁধানো ছবি থেকে ঋতম হাসছে সেই সারল্যের হাসিটা, ছবির নিচে লেখা - "অন্তরও গ্লানি সংসার ভার/পলক ফেলিতে কোথা একাকার।২৩.০৮.২০১৬"। জয়া স্তম্ভিত, তার সারা শরীরে যেন অসাড় হয়ে আসছে আর দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি নেই তার, বসে পড়ল মাটিতে। ভেতর থেকে ঋতমের মা গত বছরে লেখা
ঋতমের ডায়েরীটা দিল জয়ার হাতে, তাতে প্রথম পাতায় লেখা-"পাগলী! তোর অপেক্ষায়............................. " "পাগলী, আমার প্রতিটা মূহুর্তে তুই আছিস। আজ এক বছর হয়ে গেল আমার চাকরির, এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। তুইতো আর এলিনা আমার কাছে। তোকে ছেড়ে আর থাকতে পারছি না রে! এইবার বাড়ি ফিরেই মা কে বলব সমন্ধ নিয়ে তোর বাড়িতে যেতে ভালোবেসে তো বিয়ে করলিনা, সমন্ধ করেই না হয় সামাজিকভাবে বিয়ে করিস।"
ঋতমের ডায়েরীটা দিল জয়ার হাতে, তাতে প্রথম পাতায় লেখা-"পাগলী! তোর অপেক্ষায়............................. " "পাগলী, আমার প্রতিটা মূহুর্তে তুই আছিস। আজ এক বছর হয়ে গেল আমার চাকরির, এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। তুইতো আর এলিনা আমার কাছে। তোকে ছেড়ে আর থাকতে পারছি না রে! এইবার বাড়ি ফিরেই মা কে বলব সমন্ধ নিয়ে তোর বাড়িতে যেতে ভালোবেসে তো বিয়ে করলিনা, সমন্ধ করেই না হয় সামাজিকভাবে বিয়ে করিস।"
Ritam Chatterjee
Karolbag, New Delhi
লেখা - রক্তিমা ব্যানার্জ্জী
(Copyright Protected)
(Copyright Protected)
আপনিও যদি আপনার লেখা ছোটো গল্প আমাদের পাঠাতে চান,
পাঠিয়ে দিতে পারেন আমাদের Email ID তে।
আমরা সেটি খুব তাড়াতাড়িই পোস্ট করে দেবো।
আমাদের Email ID- icchekore.ik@gmail.com
No comments:
Post a Comment